ভারতের গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থা-এর আসুবিধা গুলি বিস্তারিত আলোচনা করো ।
ভারতের গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থা
🌷🌸গ্রামীণ উন্নয়ন (Rural Development) 🌸🌷
🌸B.A General -6th Semester 🌸
🌷Geography🌷
ভারতের গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা ব্যবস্থা (Education system in rural areas in India)
শিক্ষার অধিকার হল ভারতের প্রত্যেক জনসাধারণের মৌলিক অধিকার। ভারতের গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নশীল পর্যায়ে স্থিত। গ্রামে বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো অনুন্নত। গ্রামে বিদ্যালয়ের সংখ্যা কম। গ্রামের বিদ্যালয়গুলির বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার অভাব লক্ষ্য করা যায়। গ্রামে বিদ্যালয়ের সংখ্যা কম হওয়ায় অনেক দূর থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বহু কষ্টে বিদ্যালয়ে আসে। যাতাযতের এই অসুবিধার জন্য অনেক শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় না। তাই গ্রামে যাতায়াত ব্যবস্থা ও বিদ্যালয়ের সংখ্যা উন্নত করা প্রয়োজন। এছাড়া বিদ্যালয়ে প্রথাগত একই পদ্ধতিতে পড়ানো হয় যা শিশুদের বা ছাত্র-ছাত্রীদের বোধগম্য হয় না। তাই নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হলে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনায় সঠিক মন-নিয়োগ করবে এবং এর ফলে ধীরে ধীরে গ্রামে শিক্ষা। ব্যবস্থা উন্নত হবে, মানুষের চিন্তাভাবনা উন্নত হবে ও গ্রামের উন্নয়ন ঘটবে।
খ। অনুন্নত যাতাযাত ব্যবস্থা: গ্রামের বিদ্যালয়গুলির সংখ্যা কম। ভারতের অনেক গ্রামে বিশেষত পাহাড়ি অঞ্চলে কোনো বিদ্যালয় নেই। তাই সেই গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা যানবাহনের অভাবে পায়ে হেঁটে পাশের গ্রামের বিদ্যালয়ে যায়। ভারতে গ্রামাঞ্চলে যাতাযাত ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় এর প্রভাব শিক্ষা ব্যবস্থাতেও পড়ে। অনেক পড়ুয়া যাতায়াতের অসুবিধার জন্য নিত্যদিন বিদ্যালয়ে যেতে পারে না।
গ। পরিকাঠামোর অভাব: গ্রামের বিদ্যালয়গুলিতে সঠিক পরিকাঠামোর অভাব দেখা যায়। যেমন আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, বেঞ্চ-এর অভাব, অন্যান্য সুযোগ সুবিধার (প্রস্রাবাগার, পানীয় জল প্রভৃতির) অভাব। গ্রামে এমনও বিদ্যালয় আছে যেখানে পড়ুয়ারা মেঝেতে পড়তে বসে, সেখানে কোনো বেঞ্চ বা চেয়ার নেই।
ঘ। পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপের অভাব: গ্রামে বিদ্যালয়গুলিতে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো না থাকয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা সঠিক শিক্ষা পায় না। এই অনুন্নত পরিকাঠামোর ফলে পড়ুয়ারা পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ থেকে বিরত থাকে। পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপ বলতে গান, নাচ, আবৃত্তি, আঁকা, খেলা প্রভৃতিকে বোঝায়। শিশুরা পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপে মনোনিয়োগ করলে তাদের চিন্তাভাবনার অগ্রগতি ঘটবে।
ঙ। আর্থিক সম্পদের ঘাটতি : গ্রামের বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামো, শিক্ষাদানের পদ্ধতি, সাধারণ প্রয়োজনীয়তাগুলি উন্নত করতে আর্থিক সম্পদ বা সামর্থ্য থাকা প্রয়োজন। কিন্তু গ্রামের জনসাধারণের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় এবং বিদ্যালয়ের নিজস্ব যথার্থ অর্থ না থাকায় বিদ্যালয়গুলির উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। চ। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিয়াকলাপের অনুপস্থিতি : গ্রামের বিদ্যালয়গুলিতে প্রতিযোগিতামূলক কোনো ক্রিয়াকলাপ প্রায় হয় না বললেই চলে। যেমন- খেলাধুলা, নাচ, গান, শারীরিক কার্যকলাপ প্রভৃতি। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং শেখার দিকে তাদের মন পরিবর্তিত হয়।
ছ। স্বল্প শিক্ষক-শিক্ষিকা : শিক্ষা ব্যবস্থায় দক্ষ শিক্ষক বা শিক্ষিকার খুব প্রয়োজন। কারণ শিক্ষক বা শিক্ষিকা যদি দক্ষ না হয় তাহলে তারা দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরি করতে পারবে না। অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক বা শিক্ষিকার সংখ্যা খুব কম, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ১ জন। কিন্তু মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে প্রতিটি বিষয়ের জন্য দক্ষ শিক্ষক বা শিক্ষিকার প্রয়োজন হয়, যার অভাব গ্রামের বিদ্যালয়গুলির শিক্ষা ব্যবস্থার অবনতির একটি কারণ।
জ। স্বল্প অর্থ উপার্জন : গ্রামাঞ্চলের শিক্ষক বা শিক্ষিকারা তাদের নির্দিষ্ট কর্মের জন্য পর্যাপ্ত বেতন পায় না। এই অপর্যাপ্ত বেতন তাদের জীবনধারণের জন্য চলনশীল নয়। শিক্ষকরা পরিশ্রমের পর্যাপ্ত বেতন না পেলে তারাও পড়ানো বা শিক্ষাদানের ইচ্ছা হারিয়ে ফেলে এবং উচ্চ বেতনশীল চাকরির চেষ্টা করে। ঝ। পক্ষপাত মূলক আচরণ: গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলিতে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার ক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক আচরণ করা হয়। যেমন কোনো একটি কার্যকলাপে ছেলেদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হলেও সেখানে মেয়েরা অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এছাড়া শিক্ষার পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও ছাত্র ও ছাত্রীর মধ্যে একই পক্ষপাতমূলক ব্যবহার করা হয়, যা শিক্ষার অবনতির কারণ।
আরও দেখো👇👇
১। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গুলি আলোচনা করো।
২। ভারতের সরকার কতৃক গৃহীত কার্যক্রম গুলি কী কী? বিস্তারিত আলোচনা করো।
৩। অপারেশন ব্ল্যাকবোর্ড ও সর্বশিক্ষা অভিজান সম্বন্ধে লেখো।