Primary Education।। Class- Six।। শ্রেণি-সপ্তম।। অনুচ্ছেদ রচনা
অনুচ্ছেদ রচনা
নিম্নলিখিত বিষয় অবলম্বন করে অনধিক ১০০ শব্দে অনুচ্ছেদ রচনা করো।
রুদ্রতাপস গ্রীষ্ম
বসন্তের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার আকাশে বাতাসে বেজে ওঠে গ্রীষ্মের দুন্দুভি। শুরুহয় রুদ্রতাপস গ্রীষ্মের তপস্যা—তার তেজে পুড়ে যায় বাংলার বাতাস, মাটি আর প্রাণীকুল। বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ হল রুদ্রতাপসের তপস্যাকাল। বৃষ্টিহীন আকাশে সূর্যের তাপে তপ্ত হয়ে ওঠে পৃথিবী। মাটিতে পা রাখা যায় না যায় না বাইরে বের হওয়া। প্রখর দাবদাহে মানুষ, জীবজন্তু, পাখি সকলেই হাঁসফাস করে। মাটি হয়ে যায় চৌচির–কোথাও পাওয়া যায় না একফোঁটা জলের চিহ্ন। কিন্তু তবুও সহ্য করতে হয় প্রকৃতির এই ঋতুপর্যায়কে। এই দাবদাহের কঠিন জীবনে স্বস্তি পাওয়া যায় বাজারে আম, জাম, কাঁঠালের পসরা দেখে। এই সুস্বাদু ফলগুলি এই সময়েই পাওয়া যায়।
এই সময়ে সুবিধা বলতে খুব একটা কিছু নেই, বরং আছে অসুবিধা। গরমে দেখা দেয় নানা রোগ-বালাই। তবুও গ্রীষ্মকে মেনে নিতে হয়, কারণ এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে বর্ষারানির আগমন বার্তা।
উৎসবমুখর শরৎ
বর্ষা চলে যেতেই আমাদের কালো মুখ আবার ফরসা হতে থাকে। সূর্যের নবীন কিরণে জেগে ওঠে বাংলার বুকে শরৎকাল, ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে। আকাশে দেখা যায় সাদা মেঘের ভেলা, এ প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে করে আনাগোনা সাদা হাঁসের দল। দিকে দিকে ফুঠে ওঠে কাশফুল, আবাহন করে দেবী দুর্গার আগমনকে। উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয় বাংলার মানুষ। দুর্গাপূজা, ঈদ, দীপাবলির জাদুকাঠিতে বাংলার মানুষের মনে লাগে প্রাণের ছোঁয়া। শরৎকালের সময়টা উৎসবেরই সময়। তাই ছোটো থেকে বড়ো সবাই নেচে ওঠে উৎসবের আঙিনায়।
এই উৎসব কেবলমাত্র আনন্দলাভের জন্য নয়, এর মধ্যে জেগে ওঠে সকল মানুষের মধ্যে মিলনের আকাক্ষা। সকল ধর্মের, জাতি ও বর্ণের মানুষ উৎসবের আনন্দে একত্রিত হয়ে একাত্ম হয়ে যায়। ভুলে যায় বিভেদের বেড়াজাল। এইটিই এই ঋতুর সার্থকতা।
হিমেল শীত
পৌষ-মাঘে এল শীত সঙ্গে নিয়ে উত্তরের হিমেল হাওয়া। মানুষকে করে দেয় জবুথবু। প্রকৃতি হয়ে যায় রুক্ষ্ম— যেন কোথাও রসকষ নেই। আর এই রুক্ষ্মতার মধ্যে দেখা দেয় সান্ত্বনা স্বরূপ হরেক ফুল ও ফলের সমারোহ। আর মাঠ-ঘাট ভয়ে যায় নানান সবজির পসরায়। এতরকমের শাকসবজি আর ফল আর কখনও মেলে না। কমলালেবু, আপেল, আঙুর, ন্যাশপাতি আর ফুলকপি, কড়াইশুঁটি এগুলির রসনাকে তৃপ্ত করে। রসনার আর-এক উপকরণ আসে খেজুর গাছ থেকে, খেজুরের গুড়, পাটালি—মাতিয়ে দেয় পিঠে, পুলি আর পায়েসকে। বাঙালির ঘরে ঘরে নলেন গুড়ের পায়েস-এর গন্ধে মৌ মৌ করে। ছোটো-বড়ো সকলেই মেতে ওঠে বনভোজনে। ছুটির দিনে নতুন আমেজ নিকটে বা দূরে চলে পিকনিকের আয়োজন। দিকে দিকে শোনা যায় নানা মেলার কথা, শান্তিনিকেতনে পৌষমেলা, জয়দেবের মেলা আর গঙ্গাসাগরের মেলা। বাঙালি মেতে ওঠে আনন্দ ভ্রমণে।
বর্ষণমুখর একটি রাত
বিকেল থেকেই কালো মেঘের জমায়েত চলছিল সারা আকাশ জুড়ে। সন্ধ্যার একটু পরেই শুরু হল অঝোর ঝরে বরিষণ। চারিদিক বৃষ্টির ধারাপাতে হয়ে উঠল জলময়। বৃষ্টি, বৃষ্টি আর বৃষ্টি। খাওয়াদাওয়া সেরে নিজের ঘরে বসে বৃষ্টির শব্দ শুনতে লাগলাম। মনের মধ্যে কত না স্মৃতির ভিড়, সে সবের মধ্যে বৃষ্টিপাতের এক অদ্ভুত অনুভূতি জেগে ওঠে। ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম বারান্দায়। দেখতে লাগলাম বৃষ্টিতে স্নান করছে ধরিত্রী। একবার মনে হল ছুটে যাই খোলা জায়গায় নিজেকে ভিজিয়ে নিতে। কিন্তু সাহস হল না, কেন জানি না। মনে হচ্ছে শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি এই অপরূপ দৃশ্যকে।
বৃষ্টি থামছে না, মনে হচ্ছে আজ রাতে আর ঘুম আসবে না, তাই জানালা খুলে দেখলাম সারা এলাকায় বাড়ির মাথায় বৃষ্টিপাতের কী অপরূপ রূপ। কখন জানি না বৃষ্টির ধারার গানে মুগ্ধ হয়ে ঘুমিয়ে গেছি। সকালে উঠে দেখি সব জলে জলাকার।
শীতের একটি দিন
শীতকালের সময় ঘুমটা ভেঙেছে অনেক আগেই কিন্তু উঠতে ইচ্ছে করছে না বিছানা থেকে। জানালা দিয়ে উকি দিয়ে দেখি সূর্যদের এখনো দেখা দেননি। চারদিক ঘন কুয়াশায় সকালটাকে করে রেখেছে অন্ধকার। কি করা যায়, উঠতে হল। বেলা বাড়ল দিননাথ উঁকি দিলেন কুয়াশার পর্দা সরিয়ে। কী মিষ্টি রোদ। ছাদে গিয়ে দাঁড়ালাম, গায়ে মিষ্টি রোদের স্পর্শে একটু তাজা হলাম। দুপুরের দিকে আর একটু পরিষ্কার হল, দেখলাম পাশের বাগানটায় একদল কচিকাঁচাদের ভিড়। বোধহয় পিকনিক করছে, সেখানে বড়োরাও আছেন। সকলেই শীতের আমেজে চড়ুইভাতির মজা নিচ্ছে। মনে হল ছুটে যাই তাদের
হলে। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। চড়ুইভাতির একটি দলে ছিল আর দু-একজন বন্ধু, তারা ডাকতে এসেছে, তাদের আনন্দমেলায় যোগ দিতে। ছুটে গেলাম ওদের দলে।
বইমেলায় একদিন
গতকাল থেকে ময়দানের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে জেলা বইমেলা। আমার প্রিয় বইমেলা, প্রতিবছর বসে আর প্রতিবছরই যাই বইয়ের সাথে মুলাকাত করতে। সব কাজ সকাল সকাল সেরে ফেলে বিকাল তিনটায় বের হলাম বইমেলার উদ্দেশ্যে। টিকিট কেটে প্রবেশ করলাম। দেখলাম চারদিক, অজস্র স্টল রয়েছে নানা ধরনের বইয়ের পসরা নিয়ে। চিরাচরিত বইয়ের মধ্যে দেখতে পেলাম কিছু নতুন ধরনের বই। ইচ্ছে হচ্ছিল সব বই কিনে ফেলি, কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য নেই। তারই মধ্যে আমার প্রিয় দুটো গোয়েন্দা কাহিনি কিনে নিলাম। রত্রি হয়ে আসছে, এবার ফিরতে হবে, কিন্তু মন চাইছিল না এখান থেকে যেতে, কিন্তু তবু যেতে হল–একটাই আক্ষেপ সব বইগুলো দেখা হল না। দেখি আরেকদিন যদি আসা যায়—এই আশায় বাড়ি ফিরলাম।
মাদার টেরেজা
আলবেনিয়ার স্কোবিয়ে নামক স্থানে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট মাদার টেরিজা জন্মগ্রহণ করেন। মাতা ড্রানফিল ছিলেন ধর্মপ্রাণ মহিলা, আর পিতা নিকোলাই ছিলেন একজন উদ্যোগপতি। বাল্যকালে তাঁর নাম ছিল অ্যাগনেস।
মায়ের আধ্যাত্ম চেতনা ও দানের অভ্যাস অ্যাগনেসকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল। তিনি মাত্র বারো বছর বয়সেই সন্ন্যাসিনী হবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। যখন তাঁর বয়স আঠারো তখন তাঁর মনে হয় যে আর্তের সেবা করাই তাঁর একমাত্র কাজ। তারপরে তিনি ভারতবর্ষে আসেন এবং কলকাতায় এসেই দার্জিলিং যান সন্ন্যাসিনীদের প্রশিক্ষণ নিবাসে। সেখান থেকে কলকাতায় এসে সেন্ট মেরিজ স্কুলে শিক্ষিকা হন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা হয় মিশনারি অব চ্যারিটি। ১৯৫২-তে গড়ে তোলেন 'নির্মল হৃদয়', আর্তের সেবায় সম্পূর্ণ আত্মনিয়োগ করেন।
ভারতের বিভিন্ন স্থানে গড়ে তোলেন একাধিক আর্তসেবাকেন্দ্র। এঁর মধ্যে তিনি হয়ে গেছেন 'মাদার টেরিজা'। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি শান্তির জন্য' নোবেল শাস্তি' পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে পান 'ভারতরত্ন' উপাধি। এছাড়াও তিনি নানাদেশ ও সংস্থা থেকে অনেক সম্মান পেয়েছিলেন। মাদার টেরিজা একালের বিশ্বে এক গর্বময় চরিত্র। মানুষ তাঁকে সেবা ও ত্যাগের জন্য চিরকাল মনে রাখবে। ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ সেপ্টেম্বর এই মহিয়সী মহিলা অমরলোকে যাত্রা করেন।
জগদীশচন্দ্র বসু
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার অগ্রদূত আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০ নভেম্বর বর্তমান বাংলাদেশের বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম ভগবানচন্দ্র বসু ও মাতা বামাসুন্দরী দেবী। তাঁর পিতা ছিলেন সেকালের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। শিক্ষা শেষ করার পর তিনি বিজ্ঞান সাধনায় মন দেন। তাঁর বিজ্ঞান সাধনায় ছিল বেতার তরঙ্গ, উদ্ভিদের প্রাণ ও উত্তেজন আছে ইত্যাদি বিষয়। তিনি ক্রেস্ফোগ্রাফ' নামে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর গবেষণার জন্য লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি. এস. সি. উপাধি দেয়। তিনি লন্ডনের রয়্যাল ইনস্টিটিউশন-এ আমন্বিত হয়েছিলেন। তিনি বিজ্ঞানচর্চার জন্য কলকাতায় 'বসু বিজ্ঞান মন্দির গড়ে তোলেন। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে ২৩ নভেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।
বিদ্যালয়ে প্রথম দিন
আমি যে বিদ্যালয়ে ভরতি হয়েছিলাম তার নাম বনয়ারীবাদ মহারাজার উচ্চবিদ্যালয়। ভরতি হওয়ার সময় আমার বাবা। আমার সঙ্গে ছিলেন। বিদ্যালয়ে প্রথমদিন আমি ঠিক সময়েই পৌঁছোই। শ্রেণিকক্ষে ঢুকে প্রথম বেঞ্চিতে বসার সুযোগ পেলাম না। তাই পরের বেঞ্চিতে বসলাম। শিক্ষক মহাশয় আসার পর সকলের সঙ্গে পরিচয় করতে করতে আমাকেও, আমার নাম ও পরিচয় জানতে চাইলেন। আমি বলার পর একটা ছোট্ট প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন আমি তার জবাব দিই। শ্রেণির অনেক নতুন নতুন বন্ধুর সঙ্গে প্রথম পরিচয় হল। পাঠশালা থেকে হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভরতি হয়ে অনেক নতুন অভিজ্ঞতা হল। স্কুলটা ছিল বিশাল আর ছাত্রও অনেক। প্রথমদিনে সকলের সঙ্গে পরিচয় সারা সম্ভব হল না তবে, দু-একজনের সঙ্গে সামান্য ঘনিষ্ঠতা হল। এক নতুন পরিবেশে এসে বেশ ভালো লাগল। এই স্মৃতি কোনোদিন ভোলার নয়, যতদিন বাঁচব তা মনের মধ্যে জেগে থাকবে।
বিদ্যালয়ে পরিবেশ দিবস উদ্যাপন
আমাদের চারদিকে এখন নানারকম দূষণের ছড়াছড়ি। বায়ুদূষণ, জলদূষণ, শব্দদূষণ ইত্যাদি এইভাবে আমাদের প্রকৃতি দিল দিন বিষাক্ত হয়ে উঠছে। এর জন্য কিন্তু আমরাই দায়ী। অসংখ্য যানবাহন, কলকারখানা, রাস্তাঘাটের নোংরা পরিষ্কার ন করা—এইসব দুষণের উৎস।
এই দূষণ কীভাবে কমানো যায় তা নিয়ে আলোচনার জন্য বিশ্ব পরিবেশ দিবসে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় আমাদে বিদ্যালয়ে। সেখানে নানা ব্যক্তি জানালেন আমাদের পরিবেশের বর্তমান অবস্থা ও তা রক্ষা করার উপায়।
এই অনুষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে আমরা সকলে মিলে ও সভার কর্তাব্যক্তিরা বৃক্ষরোপণের কাজ করলাম। বিভিন্ন স্থানে সকলকে সচেতন করার জন্য পোস্টার কেমন হবে তার একটা প্রতিযোগিতাও হল। সেরা পোস্টার লেখককে পুরস্কার দেখে হল। সকলে মিলে শপথ নেওয়া হল আমাদের পৃথিবীকে দূষণ মুক্ত করার কাজকে সফল করার।