Primary Education।। রচনা শিক্ষা।। ঋতু বিষয়ক রচনা।। দুর্গাপূজা।। সরস্বতী পূজা।। মহরম।। একটি মেলার বর্ণনা
কোনো বিষয়কে সাজিয়ে বর্ণনা করার নামই রচনা। যে বিষয়ে লিখতে হবে, সে বিষয় ভালোভাবে চিন্তা করে নিতে হবে। যে যে বিষয় বলতে হবে, তার মধ্যে আগে ঠিক বলতে হবে এবং পরে কি বলতে হবে তা নিজের মানের সবার আগে ঠিক করে নিতে হবে। কোনো বিষয় থাকে একবারের বেশি বলা না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখা উচিত।
ধরো, গোলুর বিষয় লিখছি। প্রথমে বললাম- গোরু চতুষ্পদ জন্তু। এই কথা বলার পর আবার যদি বলি- তার চারটি পা আছে, তবে আগে বলা কথাটাই আবার, বলা হল না কি? সুতরাং এ বিষয় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রবন্ধ বা রচনা লেখার আগে মনে রাখা উচিত
(১) প্রবন্ধের ভাষা যেন সরল হয়। (২) একটি বিষয় যাতে দুবার বলা না হয়। (৩) একটি অনুচ্ছেদে (প্যারাগ্রাফে একটি ভাবই যেন প্রকাশ পায়। এক কথা বলতে গিয়ে তার সঙ্গে অন্যভাব প্রকাশ না পায়। (৪) প্রবন্ধের সূচনা (অর্থাৎ যা বলে আরম্ভ করতে হবে) ও শেষে উপসংহার থাকলে ভালো হয়। (৫) মূল বিষয়ের সঙ্গে সম্বন্ধ নেই, এমন কিছু লেখা উচিত নয়। রচনাকে সাধারণ সাত ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—
(ক) প্রাণী বিষয়ক
(খ) উদ্ভিদ বিষয়ক
(গ) স্থান বিষয়ক
(ঘ) জীবনচরিত বিষয়ক
(ঙ) বস্তু বিষয়ক
(চ) ঋতু বিষয়ক
(ছ) চিন্তা বিষয়ক
কোন বিষয়ের প্রবন্ধে কি লেখা উচিত, তা পর্যায়ক্রমে দেখানো হচ্ছে এবং কোন রচনাটিকে পর পর কিভাবে সাজাতে হয়, তাও দেখানো হচ্ছে।
প্রাণীবিষয়ক রচনা লিখেতে হলে বক্তব্য বিষয় এইভাবে ভাগ করে নিতে হয় ।
(১) সেটি কোন্ জাতীয়
(২) আকার ও গঠন
(৩) প্রকৃতি ও স্বভাব
(৪) প্রাপ্তিস্থান
(৫) আয়ুষ্কাল
(৬) খাদ্য
(৭) উপকারিতা ও অপকারিতা
🌻দুর্গাপূজা🌻
সূচনা : দুর্গাপূজা বাঙালির সবচেয়ে বড়ো পূজা।
বর্ণনা : শরৎকালে দুর্গাপূজা হয় শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিথিতে তিন দিন ধরে পূজা হয়। তারপর দশমী তিথিতে দশমী পূজার শেষে ঢাক ঢোল প্রভৃতি বাজনা নিয়ে শোভাযাত্রা করে প্রতিমাকে কোনো নদীতে বা বড়ো জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়া হয়। সাধারণত ষষ্ঠীর দিন দেবীর বোধন উৎসব হয়ে থাকে। দেবী প্রতিমার দু'পাশে গণেশ ও কার্তিক, সরস্বতী ও লক্ষ্মীর মূর্তি থাকে। দুর্গা একটি সিংহের উপর দাঁড়িয়ে পাপের অবতার মহিষাসুরকে দমন করছেন। দেবীর দশটি হাতে দশ রকমের অস্ত্র থাকে। তিনি ত্রিনয়না। দেবী দুর্গা মানুষের দুর্গতি দূর করেন।
উৎসব বঙ্গদেশের ঘরে ঘরে এই সময়ে আনন্দের সাড়া পড়ে যায়। গরিব বা বড়োলোক সবাই সা জামাকাপড় পরে। এই সময়ে স্কুল, কলেজ, অফিস আদালত বন্ধ থাকে। যাঁরা বিদেশে থাকেন, রে সময়ে বাড়িতে ফেরেন। পূজামণ্ডপগুলিতে ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা ভিড় করে। আরতির সময় বাজনা বাজে এবং বালক-বৃদ্ধ সকলেই ভক্তিপূর্ণ চিত্তে দাঁড়িয়ে থেকে দেবীর প্রসন্নতা ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
🌺সরস্বতী পূজা🌺
সূচনা : সরস্বতী বিদ্যার দেবী। তাই সাধারণত ছাত্রছাত্রীরাই সরস্বতী পূজা করে। → বর্ণনা : বসন্তকালের প্রথমদিকে শুক্লাপস্বমী তিথিতে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। দেবী নেতা তিনি
একটি হাঁসের উপরে বসে থাকেন। তাঁর হাতে বীণা থাকে। কোলের উপর বই থাকে। পূজার দিন সকালে উপবাসী থেকে সকলে দেবীর পায়ে পুষ্পাঞ্জলি দেয়। পূজার পর সকলে মহানাদে অসাদ গ্রহণ করে সন্ধ্যাবেলাতেও পুজামন্ডপে ধুমধাম করে আরতি হয়। পরদিন সকালে দধিকর্মা' উৎসবের পর পূজা শেষ হয়। সন্ধ্যাবেলা শোভাযাত্রা করে দেবী-প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া ।
উৎসব : বঙ্গদেশের প্রায় প্রতি বাড়িতেই সরস্বতী পূজা হয়। ছোটো ছেলেমেয়েরা ছাপানো বাসন্তী রঙের কাপড়জামা পরে। আজকাল বারোয়ারি পূজামণ্ডপে এই পূজা হয়ে থাকে।
🌹মহরম🌹
সূচনা : মুসলমানদের যে সমস্ত উৎসব অনুষ্ঠান পালিত হয় মহরম তার মধ্যে অন্যতম।
উৎসবের ইতিহাস : মুসলমানদের মধ্যে দুটি সম্প্রদায় আছে। শিয়া ও সুন্নী। শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা এই উৎসব পালন করে। হজরত মহম্মদের কন্যার নাম ফতেমা। ফতেমার দুই পুত্র হাসান ও হোসেন। মুসলিম সমাজের একদল লোক হাসান ও হোসেনকে তাদের খলিফা অর্থাৎ ধর্মগুরু হিসেবে মেনে নিল। কিন্তু আর এক দল লোক তা মানল না। তারা মাবিয়া নামে অন্য একজনকে ধর্মগুরু হিসেবে মেনে নিল। এ থেকেই জন্ম নিল বিরোধ। নারিয়ার পুত্র এজিদ হাসানকে হত্যা করেন। পরে কারবালা প্রান্তরে হোসেনের সঙ্গে এজিদের যুদ্ধ বাঁধে। এই যুদ্ধে হোসেনও নিহত হন। মৃত্যুকালে হোসেন এক ফোঁটা জলও পাননি। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে শোক তা স্মরণ করার জন্যই মহরম অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন মুসলিমরা।
অনুষ্ঠানের বর্ণনা : প্রতি বছর এই মহরম অনুষ্ঠিত হয় মহরম মাসে। ওই দিন হোসেনের সমাধির অনুকরণে রং-বেরঙের তাজিয়া মুসলমানরা বের করেন। → উপসংহার : যদিও শোকের অনুষ্ঠান তবু শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ এই উৎসব অনুষ্ঠান যথাযথভাবে পালন করেন।
🌸একটি মেলার বর্ণনা🌸
অগ্রহায়ণ মাসে রাস পূর্ণিমার সময়ে আমাদের পাড়ায় গোপীনাথের চত্বরে মেলা বসে। মেলার সরল অর্থ অল মিলন। মেলা বসবার দু-তিন দিন আগে থেকেই মাঠ পরিষ্কার করে জঙ্গল কাটা হয়। বাঁশ আর তত্ত্বা দিয়ে দোকানঘর তৈরি হয়। ছাউনি থাকে হোগলাপাতা বা তেরপলের। মেলার দিন সকাল থেকেই যে যার পণ্য জিনিস নিয়ে আসে। মাটির হাঁড়ি, কলসি, পুতুল, বেতের তৈরি ঝুড়ি, থামা, কুলো, লোহার ছুরি, বঁটি, দা নিয়ে আসে কারিগরেরা। তারই পাশে বসে যায়। কাঁচা আর প্লাস্টিকের দোকান। আর বসে তেলেভাজার দোকান। পাপড় আর জিলিপি না হলে বুঝি মেলার অধাহানি হয়। দুপুরের পর ভিড় জমতে আরম্ভ করে। সন্ধ্যাবেলার আলোয় আর লোকে মেলা গমগম করতে থাকে। ছোটোরা বেলুন ওড়ায়, খেলনা পুতুলের দোকানে ভিড় জমায়। মেয়েরা হাত বাড়িয়ে কাঁদের চুড়ি পরে। তেলেভাজা।
আর পাঁপড়ের দোকানে ছেলেবুড়ো সবাই ভিড় করে। ঠাকুরদালানে বড়ো বড়ো মাটির পুতুল সাজিয়ে কৃষ্ণলীলা-কাহিনি দেখানো হয়। আমার সবচেয়ে ভালো লাগে মেলার মাঠের নাগরদোলা আর ঘূর্ণিতে চড়তে। মেলায় একদিকে ম্যাজিকের তাঁবু। একটা ছেলের দুটো মাথা, ডল পুতুলে কয় কথা—এসব। এসব ম্যাজিক আমার ভালো লাগে না। ক'দিন পরে মেলা ভেঙে গেলে সমস্ত জায়গা আবার খালি হয়ে যায়।
(খ) উদ্ভিদ বিষয়ক
(গ) স্থান বিষয়ক
(ঘ) জীবনচরিত বিষয়ক
(ঙ) বস্তু বিষয়ক
(চ) ঋতু বিষয়ক
(ছ) চিন্তা বিষয়ক